7thpallidurgapuja.com
Get a Quote
মুড়ি খেলে যারা নাক তুলে তারা সবাই একবার পড়ুন
By ৭ এর পল্লী. কম
Tue, 18-Sep-2018, 06:01

#মুড়ি

যাইহোক, মুড়ি প্রসঙ্গে আসি৷ একটা ব্যাপার লক্ষ করেছি, মেদিনীপুর সহ বাঁকুড়া পুরুলিয়া বীরভুম সহ কয়েকটি জেলার বাইরে থাকা অধিকাংশ মানুষই মুড়ি ঠিক পছন্দ করেননা, এমনকি মুড়ির সাথে মেদিনীপুর সহ রাঢ় অঞ্চলের একটা রিলেশন তৈরী করে নিছক হাস্যরস আস্বাদনের বৃথা চেষ্টা করেন৷ তাদের বক্তব্য এটাই যে মুড়ি টা আসলে ঠিক ভদ্রলোকের খাবার নয়৷ একদম ঠিক, আপনাদের বার্গার পিৎজা পেষ্ট্রি এবং সর্বোৎকৃৃষ্ট ভাগাড়ের মাংসজাত স্বপোকা ফ্রার্স্টফুড দ্রব্যাদির কাছে মুড়ি আদপেই তুচ্ছ৷ কিন্তু আমাদের কাছে বাঙালির প্রধান খাদ্য ভাতের ঠিক সমান্তরালে অবস্থান করে এই মুড়ি৷ বিশেষ করে গ্রামের দিকে দেখা যায়, সকালে মুড়ি খেয়েই অনেকে কাজে বের হন, আবার বিকেলে ফিরেও অনেকে মুড়ির পাত্র হাতে তুলে নেন৷ এহেন মুড়ি সত্যিই আমাদের কাছে পরম প্রিয়, নির্ভরযোগ্য এবং একশো শতাংশ বিশ্বাসযোগ্য খাদ্যবিশেষ৷ কিন্তু মুড়ি খাওয়ার আগে যেটা করতে হয় সেটা হল মুড়ি ভাজা৷

মুড়ি তৈরী করতে যে অক্লান্ত পরিশ্রম আর ধৈর্য্য প্রয়োজন হয় সেটা একটু বিবরন দেওয়ার চেষ্টা করছি৷

আপনি চাইলেও আপনার শহুরে আধুনিক কিচেনে মুড়ি বানাতে পারবেন না, কারন গ্যাসওভেন, মাইক্রোওভেন এমনকি ইনডাকশন প্রভৃতি আধুনিক মেশিনে মুড়ি ভাজা যায়না৷ ঠিক যেরকম আপনি চাইলেও ওয়াশিংমেশিনে থালা বাসনপত্র ধোওয়াতে পারবেননা৷ শুদ্ধ দেশি মুড়ি সনাতনী পদ্ধতিতে মাটির উনুনে কাঠের আগুনে পোড়ামাটির পাত্রে ভাজতে হয়৷ মুড়ি তৈরীর জন্য কোন রাসায়নিক উপাদানের প্রয়োজন হয়না৷ কেবল মাত্র মুড়ির জন্য নির্দিষ্ট চাল, অল্প পরিমান সরিষার তেল, প্রয়োজন মত লবণ আর পরিষ্কার বালি৷ চাল প্রথমে জলে ভিজিয়ে নিতে হয়, তারপর সেই চালে খুবই অল্প পরিমান সরিষার তেল এবং প্রয়োজনমত লবণ মিশিয়ে সূর্যালোকে শুকনো করা হয়৷ এমন ভাবে শুকনো করতে হয় যাতে চাল ভেঙে না যায়, দক্ষ শ্রমিক ছাড়া এই রোদের মাপ নেওয়া মোটেই সহজসাধ্য ব্যাপার নয়৷ এরপর সেই চাল কে মাটির বড় পাত্র 'খোলা' তে নিয়ে উনুনে বসানো হয়৷ কাঠের আগুনের পরিমানও এখানে গুরুত্বপুর্ন, বেশি বা কম তাপে মুড়ির কোয়ালিটি খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷ এরপর সেই চালে হালকা জল ছড়িয়ে কাঠের 'হাতা' দিয়ে নাড়াচাড়া করতে হয়৷ একটা নির্দিষ্ট সময় পর সেই চাল কে নামিয়ে রেখে উনুনে মুড়িভাজার জন্য মাটির বা টিনের পাত্র রাখতে হয়৷ সেই পাত্রে পরিস্কার বালি রেখে গরম করা হয়৷ বালি একদম পুড়ে কালো হয়ে গেলে সেই গরম বালিতে অল্প অল্প চাল ফেলা হলে, মুহুর্তের মধ্যে সেই চাল সাদা ধবধবে মুড়িতে পরিনত হয়৷ কিন্তু সেই মুহুর্তেই মুড়িকে কুঁচি(এক প্রকার ঘাসের কান্ডের বান্ডিল) দ্বারা ভালভাবে ফুটিয়ে পাত্রের বাইরে এনে ফেলতে হয় এমনভাবে যাতে পাত্রের বালি বাইরে না উঠে এসে শুধু মুড়িই উঠে আসে৷ মুড়ি তৈরী হওয়ার পরপরই তাকে পাত্রের বালি থেকে তুলে না নিলে মুড়ি পুড়ে যাওয়ার সম্ভবনা প্রবল৷ এরপর ঐ ভাজা মুড়িকে বেতের ছিদ্রালো পাত্র তথা চ্যাঙারি তে ভালভাবে নাড়াচাড়া করতে হয়, যাতে মুড়ির গায়ে লেগে থাকা বালি ঝরে পড়ে৷ এর পর এই বিশুদ্ধ মুড়িকে টিন অথবা প্লাস্টিকের কৌট, ক্ষেত্র বিশেষে পলিথিনে সংরক্ষন করা হয়৷ ভালভাবে সংরক্ষন করলে বহুদিন সুরক্ষিত থাকে, নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় থাকেনা৷ এইভাবেই ঘন্টার পর ঘন্টা ঐ উনুনের ধারে কাঠের আগুনের প্রখর উত্তাপ সহ্য করে আমাদের মা ঠাকুমা মুড়ি তৈরী করেন৷

বর্তমানে মুড়ির প্রবল চাহিদা এবং পরিশ্রম বিমুখ মানসিকতা আর ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে 'মুড়ি ভাজা কল'! যেখানে পাইকারি হারে মুড়ি ভাজা হয়, কোনরকম স্বাস্থসম্মত পরিবেশ না রেখেই৷ কখনও কখনও মুড়ির আকৃতি এবং সাদা রঙ ধরে রাখতে মুড়ির চালের সাথে রাসায়নীক দ্রব্যও মেশানো হয়৷ ফলে সাদা ধবধবে বড় দানার মুড়ি পাওয়া যায় পলিথিনের প্যাকেটে৷ এই মুড়ির গুনাগুণ তেমন উল্লেখযোগ্য নয়৷ তাছাড়া এই মেশিনজাত মুড়িতে জল মেশানো হলে মুহুর্তের মধ্যে মুড়ি নরম হয়ে বেস্বাদ হয়ে যায়৷ একমাত্র নানাবিধ মশলা তেল ঝাল মিশিয়ে মুখরোচক 'মশলামুড়ি' হিসেবে খাওয়া যেতে পারে, যদিও সেটা ঠিক কতখানি স্বাস্থসম্মতা সে প্রশ্ন থেকেই যায়৷

খাবেন কিভাবে মুড়ি—

মুড়িতো ভাজা হল, এবার খাবেন কিভাবে?

মুড়ি হল এমন বিশেষ খাদ্যদ্রব্য যার খাওয়ার কোন নির্দিষ্ট সময় নেই, পদ্ধতিও নেই৷ আপনি দিন অথবা রাত্রে যেকোন সময় মুড়ি খেতে পারেন, যেকোনকিছুর সাথেই মুড়ি খেতে পারেন৷ টিভি দেখতে দেখতেও খেতে পারেন, পড়শুনা করতে করতেও খেতে পারেন, আবার একহাতে মোবাইলে আমার এই লেখা পড়তে পড়তে অন্য হাতেও মুড়ি খেতে পারেন৷ আপনি চপ দিয়ে খেতে পারেন, চানাচুর দিয়েও খেতে পারেন৷ তরকারী দিয়ে, নারকেল দিয়ে, দুধ দিয়ে, জল দিয়ে, চিনি দিয়ে, লঙ্কা পেঁয়াজ দিয়ে, বাসে বসে, ধ্যানে বসে, শুকনো, ভিজিয়ে, একহাতে, দুই হাতে...মোটামুটি আপনার যেভাবে যার সাথে ইচ্ছে মুড়ি খেতে পারেন৷ আমার পছন্দ— শুকনো মুড়ির সাথে ঘনদুধের সর, সাথে অল্প চিনি, একটু ঝালমিষ্টি চানাচুর মাখিয়ে অল্প পেঁয়াজ কাচালঙ্কা শশাকুচি, ব্যাস্ ! গ্যাঁড়ার পছন্দ— মাংসের গ্রেভীটুকু দিয়ে শুকনো মুড়ি মাখানো, সাথে হালকা রাম৷

এতক্ষন ধরে মুড়ি খেলাম বা এই যে খেতে উৎসাহিত করছি আপনাদের, কিছু তো কারন আছে বৈকি? আসুন দেখে নিই মুড়ির গুনাগুন কি! প্রসঙ্গত বলে রাখি, মুড়ির গুনাগুন সম্পর্কিত তথ্যগুলি আমি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করেছি! 

মুড়ির গুনাগুণ—

উচ্চ পরিমাণে শর্করা থাকায় মুড়ি শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং প্রাত্যহিক কাজে শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে!

ডায়াটিরি ফাইবার এর উপস্থিতির দরুন মুড়ি হজমে সাহায্য করে। মুড়ি অন্ত্রে অবস্থান ঠিক রাখতে সাহায্য করে, শরীরের মেটাবলিজমের উন্নতিতেও সাহায্য করে।

ভিটামিন ডি, রাইবোফ্লাভিন এবং থিয়ামিনের উৎস হিসেবেও মুড়ির অবদান অনস্বীকার্য। এছাড়াও ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ফাইবার রয়েছে মুড়িতে, তাই মুড়ি খেলে হাড় ও দাঁত শক্ত হয়।

মুড়ি সামান্য পরিমাণ সোডিয়াম কন্টেন্ট প্রসারিত করতে সহায়তা করে, ফলে এটি রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা গ্রহণ করে৷ মুড়ি হাই ব্লাডপ্রেশার প্রতিরোধেও সাহায্য করে, এমনকি হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধেও সাহায্য করে।

আপনার বাচ্চা যাতে আইনস্টাইনকেও পিছনে ফেলে দেয় সেজন্য আপনার চেষ্টার শেষ নেই৷ বাজারচলতি নানারকম পুষ্টিদ্রব্য উচ্চদামে গুলে খাওয়াচ্ছেন, ছেলেমেয়েও গুণিতক হারে টলার শার্পার শক্তিমান গোটাদাদা হয়ে উঠছে! একটু মুড়ি খাইয়ে দেখুন, মুড়িতে রয়েছে নিউরোট্রান্সমিটার পুষ্টিগুণ। মুড়ি খেলে মস্তিষ্কের স্নায়ু উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। এমনকি মুড়ি মস্তিষ্কের ডেভলপমেন্ট এবং কগনেটিভ ফাংশনের উন্নিতে সাহায্য করে।

রোগা হোন বা মোটা, দেখতে খারাপ হোন বা ভাল, ডায়েট কন্ট্রোল করতে আমরা সদা তৎপর৷ ডায়েটের নাম করে কতকিছুই না করি আমরা! এবার একটু মুড়ি খান৷ ঠিক ধরেছেন, মুড়ি ওজন কমাতেও এক্সপার্ট। আপনি নিশ্চিন্তে মুড়িকে নির্ভরযোগ্য ডায়েট স্ন্যাকস মানতে পারেন৷

সামনেই পুজো, বাঙালির বড় উৎসব৷ তাই দেখার এবং দেখানোর জন্য আমার আপনার চেষ্টার খামতি নেই৷ ত্বক উজ্বল করে তুলতে আমড়ার আঁঠি থেকে ঢাকের কাঠি, অনেককিছুই ব্যবহার করেছেন, করছেন বা করবেন৷ জানিয়ে রাখি, মুড়ির গুড়া কিন্তু ত্বকের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী, ব্রণ ফুসকুড়ি প্রভৃতি মুখমন্ডলের নানাবিধ রোগের যম এই মুড়ির গুঁড়া৷

এছাড়া বাজার চলতি নানান স্পাইসিফুডে আপনার পেট যদি বিদ্রোহ করে বসে, তাহলে তাকে শান্ত করে নিয়ন্ত্রনে আনার কাজেও মুড়ির জুড়ি মেলা ভার৷

ও হ্যাঁ, এই মুড়িই আবার এলিটগ্রুপে উঠে যায়, যখন কোন শপিং মল আপনাদের কাছে দুটাকার মুড়িকে নানান ক্ষতিকর মশলা দিয়ে স্পাইসি বানিয়ে কুড়ি টাকায় পরিবেশন করে৷ দাদা/দিদি, ঘরে যেটা ডিমভাজা আসলে সেটাই রেস্টুরেন্টে গিয়ে ওমলেট হয় ;)

ধন্য

Share via:

Leave a Message:
Related Updates
7th palli durgapuja.com shared a link.
Facebook video
Facebook video
সেল্ফি তুলে পুরষ্কার জিতে নিন। এ এক অভিনব প্রায়াস।
হেরিটেজ তকমা লাগিয়ে কতো মানুষের ভালবাসা নিয়ে বিরাজমান ঘাটাল ভাসাপোল
KEEP UP TO DATE

This site was designed with Websites.co.in - Website Builder

IMPORTANT NOTICE
DISCLAIMER

This website was created by a user of Websites.co.in, a free instant website builder. Websites.co.in does NOT endorse, verify, or guarantee the accuracy, safety, or legality of this site's content, products, or services. Always exercise caution—do not share sensitive data or make payments without independent verification. Report suspicious activity by clicking the report abuse below.

WhatsApp Google Map
×

Caution! Unverified Website!


The identity of this user has not yet been verified. Please make transactions at your own risk!

Safety and Abuse Reporting

Thanks for being awesome!

We appreciate you contacting us. Our support will get back in touch with you soon!

Have a great day!

Are you sure you want to report abuse against this website?

Please note that your query will be processed only if we find it relevant. Rest all requests will be ignored. If you need help with the website, please login to your dashboard and connect to support

;